বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬

আমার মনের জানলাটি আজ হঠাৎ গেল খুলে

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর--- বলাকা

আমার মনের জানলাটি আজ হঠাৎ গেল খুলে
          তোমার মনের দিকে।
সকালবেলার আলোয় আমি সকল কর্ম ভুলে
          রইনু অনিমিখে।
 
          দেখতে পেলেম তুমি মোরে
          সদাই ডাক যে-নাম ধ'রে
     সে-নামটি এই চৈত্রমাসের পাতায় পাতায় ফুলে
              আপনি দিলে লিখে।
     সকালবেলার আলোতে তাই সকল কর্ম ভুলে
               রইনু অনিমিখে।
 
     আমার সুরের পর্দাটি আজ হঠাৎ গেল উড়ে
              তোমার গানের পানে।
     সকালবেলার আলো দেখি তোমার সুরে সুরে
              ভরা আমার গানে।
              মনে হল আমারি প্রাণ
          তোমার বিশ্বে তুলেছে তান,
     আপন গানের সুরগুলি সেই তোমার চরণমূলে
              নেব আমি শিখে।
     সকালবেলার আলোতে তাই সকল কর্ম ভুলে
              রইনু অনিমিখে।
 
 
  সুরুল, ২১ চৈত্র, ১৩২১

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

কাল্পনিক ভালবাসি ।

দুই প্রজাপতি একজন আরেকজনকে খুব ভালোবাসতো।।তাদের মাঝে প্রায়ই তর্ক হতো যে কে কাকে বেশি ভালোবাসে।। যাই হোক, একদিনতারা দুজনে একটা বাজি ধরল।। বাজির শর্ত ছিল, তারা যেই বাগানে থাকে সেই বাগানের সবচেয়ে সুন্দর ফুলটার উপর একদম সকালে যে আগে বসতে পারবে সেই অন্যজনকে বেশি ভালোবাসে!! মেয়ে প্রজাপতিটা রাতে আর ঘুমাল না।। সে শুধু ভাবতে লাগলো।। ঘুমিয়ে পড়লে যদি ছেলে প্রজাপতিটা আগে চলে যায়!! খুব সকালে মেয়ে প্রজাপতিটা তাড়াতাড়ি বাসাথেকে বের হয়ে উড়তে উড়তে সবচেয়ে সুন্দর ফুলটার কাছে গেলো।। তখন ছিল একদম ভোরবেলা।। চারিপাশে আলোও ফুটেনি।। সে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন সকাল হবে আর ফুলটা ফুটবে!! সকাল হল।। সূর্যের প্রথম কিরণ সেই বাগানের সবচেয়ে সুন্দর ফুলটার উপর পড়লো।। আর মেয়ে প্রজাপতিটা গভীর বিস্ময়ে দেখলঃ ছেলে প্রজাপতিটা সেই ফুলের মধ্যে বসে আছে।। তারদেহে প্রান নেই।। আসলে, মেয়েটাকে সকাল বেলা চমকে দেয়ার জন্য সে গত রাত থেকেই ফুলটার মধ্যে ঢুকে যায়।। রাতে যখন ঠাণ্ডা খুববেড়ে যায় তখন সে ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে মারা যায়।। মরে সে ফুলের মধ্যেই থাকে।। নিজের প্রিয়তমাকে চমকে দিতে!! মেয়ে প্রজাপতিটি এই দৃশ্য সহ্য করতে পারে না।। আগুনেঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।। ভালোবাসা আসলো এমনি।। আমাদের যেমন বাঁচতে শেখায় তেমনি মাঝে মাঝে অনেক বেশিদুর্বল করে ফেলে।

ভৌতিক গল্প: “কাকতাড়ুয়া” – মোঃ জাহিদুল ইসলাম

বেশ কয়েকদিনের ছুটি পেয়েছি। ঈদের ছুটি। বেসরকারি চাকুরির জাঁতাকলে পড়ে জীবন পুরোটা তেজপাতা হয়ে গেল। সকালের সূর্যোদয় আর রাতের ঘনকালো অন্ধকার ছাড়া পুরো সপ্তাহে আর কোনকিছুই চোখে পড়েনা। ঢাকাগামী গোধূলী আজ দেড়ঘন্ঠা
দেরি করেছে। রাত বারোটা। ঢাকা থেকে গ্রামে পৌঁছুতে পৌছুঁতে কম হলেও দেড়টা-দুটো বাঁজবেই। হুট করে বাড়ি যাচ্ছি, জানিয়ে গেলে অনেক ধরনের উৎটকো সমস্যা। এই যেমন, একটু পর পর বাবা ফোন দিবে, কোথায় আছি, কি করছি জানতে চাইবে ?অনেকদিন পর বাড়ি ফিরবো বলে মা আবার হাজার রকমের পিঠা বানাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। ফলাফল, ছুটি শেষে শহরে ফিরে আসতে কষ্ট হবে। তার চেয়ে বরং না জানিয়ে চলে আসছি, দু’একদিন থাকবো তারপর ছুটি শেষে ঠিক ঠিক চলে যাবো!
বর্তমানে প্রধান সমস্যা হল, বাজার থেকে বাড়ি ফিরবো কি করে ?
দেড়টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে এরপর ধীরে ধীরে সব বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে, এক স্টেশন আগেই বাস থেকে নেমে যেতে হবে। বাস থেকে নেমে উত্তরের ধানীক্ষেতটা ধরে দু-তিন মাইল জায়গা হাঁটতে হবে। বাবাকে এই মাঝরাতে ফোন দেয়া ঠিক হবে কিনা একবার ভাবলাম। নাহ, প্রয়োজন নেই বুড়ো মানুষটাকে এত রাত্রে ঘুম থেকে জাগানোর।
মাঝে মাঝে বাস থামছে লোক নামছে। ওঠার কোন প্যাসেঞ্জার নেই। এতো রাতে কে উঠবে। যারা আছে তার সবাই বাস থেকে নেমে বাড়ি যাচ্ছে। আমি ঘড়ির দিকে তাকাই। ঠিক দেড়টা নাগাদ বিরাণভূমির সামনে এসে বাস থামলো। দেখলাম তখন আমরা বাসে মাত্র সাতজন যাত্রী। আমিই একমাত্র এই নির্জন জায়গায় নামলাম। উপায় নাই। আর কেউ নামলো না। আমাকে নামিয়ে দিয়ে বাস ফুস শব্দ করে চলে গেলো। চোখে অন্ধকার দেখছি। চারদিক ঘুট ঘুটে অন্ধকার। একবারে শুনসান। ধারে কাছে কেউ নেই। একটু আলোর চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না। বাসের পেছনের লাল লাইটটা ক্রমশঃ অন্ধকারে মুখ ঢাকা দিলো।
স্থানুর মতো কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
পকেট থেকে তের মেগাপিস্কেলের ফ্ল্যাসওয়ালা মোবাইলটা বের করলাম। হায় কপাল লো ব্যাটারি দেখিয়ে বন্ধ হয়ে গেল। আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশটা
কেমন লাল। এতো অন্ধকার হাত পনেরো দুরের রাস্তাটুকু খালি দেখতে পাচ্ছি তারপর ঘুটঘুটে অন্ধকার সব কিছু গ্রাস করে নিয়েছে। জোনাকী পোকাগুলোর ইতি উতি আলোটুকু পর্যন্ত নেই। ঝিঁঝিঁপোঁকাগুলো অনবরত ডেকে চলেছে । ভীষণ বিরক্ত লাগলো। ভাবলাম একবার সামনের বাজারেই পুরো রাতটা কাটিয়ে দিই। ভোরসকালে গাঁয়ের লোকেরা আমায় ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে আবার কি ভাববে। তাছাড়া এতোরাতে বাজারেও কেউ জেগে থাকে না। বুঝলাম আজ কপালে আমার অশেষ দুর্গতি। যদি এখান থেকে
একটা রিক্সাও থাকতো তবে বিশ টাকার ভাড়া দেড়শটাকা দিয়ে বাড়ি চলে যেতাম। খুব তাড়াতাড়ি হাঁটলেও আমার আড়াই ঘন্টা লাগবে এই অভিশপ্ত রাস্তাটুকু পার হতে। যতই আমি গ্রামের ছেলে হই। আজ প্রায় দশ বছর গ্রামের বাইরে। বছরে একবার কিংবা দু’বার আসি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনের সঙ্গে যুদ্ধ করলাম। পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম। পকেটে টর্চ নেই তবে ছাতাটা আছে। মা বার বার বলতেন, শীতের কাঁথা আর বর্ষার ছাতা সবসময় সঙ্গে রাখবি। দেখবি পথে ঘাটে কখনো অসুবিধে হবে না।
আলো বলতে , লাইটারের পেছনে ছোট্ট লাইট , আর মোবাইলের টর্চ। ভেবে কোন লাভ নেই। হাঁটতে যখন হবেই এখানে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। হাতে লাইটার আর ছাতা। শুরু করলাম হাঁটা। তিন কিলোমিটার ফাঁকা মাঠ জনবসতি শূন্য নিশুত পুরি।
ভাবতেই বুকের ভেতরটা হিম হয়ে গেলো। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভাবছি।
করিম মিঞ্চার পরিত্যক্ত ভিটে। এ ভিটে নিয়ে গ্রামে অনেক লোকের অনেক ককথা প্রচলিত আছে। সন্ধ্যে হলেই এ পথ কেউ মাড়াতে সাহস করেনা। বাঁশবাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটছি। সামান্য হাওয়া দিচ্ছে। বাঁশ গাছ গুলো নড়ছে। ক্যাঁচর ক্যাঁচর একটা
আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে সব দোয়া-দূরুদ পড়া
আরম্ভ করলাম। আকাশের দিকে তাকালাম। মুখটা কেমন ভার ভার , বুঝলাম বাড়ি পৌঁছুবার আগে ঝড় উঠতে পারে। হেরে গলায় গান গাওয়া শুরু করলাম , যতো তাল দিয়েই গান গাইছি না কেন ম্লান লাগছে। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ইংরেজিতে বে – সুরে গান গাইতে আরম্ভ করলাম। কোন গানই পুরো গাইতে পারি না। সব কেমন যেন ছোট
ছোট হয়ে যাচ্ছে। তিতিক্ষার শেষ। করিম মিঞার ভিটে পাড় হলাম। এবার চাঁনপুকুর। এ পুকুর নিয়ে শোনা ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভাসমান হতে লাগল। হঠাৎ, কালো রঙের একটা কুকুর পাশ কাটানোর জন্য উতলা হয়ে গেল। নিজের ভবিষ্যৎ পরিণতি বুঝতে আর বাকি রইলোনা। দ্রুত পা চালানোর চেষ্টা করছি কিন্তু তবুও কেন যানি পথের দূরুত্বটা অনেক মনে হচ্ছে। মা-দাদীর কাছে শুনেছিলাম, মাঝরাত্তিরে নাকি পুকুরের পানি ফুঁড়ে একদল মানুষ বের হয়ে আসে। কাফনের কাপড় পরা লাশ কাঁধে পুরো পুকুর প্রদক্ষিণ করে। ফজরের আযানের আগে আবার নাকি বাতাসে মিলিয়ে যায়। গাঁয়ের অনেকেই ব্যাপারটা চাক্ষুষ দেখেনি তবে পূর্বসূরি অনুসারে শুনে শুনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
শরীরে হালকা কাঁপুনি অনুভব করলাম।
গ্রামের ঘরে ছয়টা-সাতটা মানে খেয়েদেয়ে ঘুমবার সময় হয়ে গেছে। এখন রাত দুইটা নাগাদ হবে। এখনো প্রায় আধা কিলোমিটার ! মাঠের শেষ প্রান্তে একটা হাল্কা রেখা দেখা যাচ্ছে। আলোর চিহ্নমাত্র নেই। কুয়াশামতন একটা জিনিষ বাতাসে ভর করে আমার দিকে ভেসে আসছে। পিলে চমকে উঠার মত অবস্থা। মনে মনে রাতের প্রতি বিতৃষ্ণা আসলো। আলোই ভালো। রাত্রিবেলার এই অদ্ভুত ভয়ংকর জিনিষ থেকে তো অন্তত দিনের বেলাতে বাঁচা যায়। এই এতোবড়ো ফাঁকা মাঠে দু – তিনটে বট অশ্বত্থ গাছ ছাড়া আর কিছু নেই। গলা ছেড়ে আবার গান ধরলাম।
চাঁনপুকুর ছেড়ে কিছুটা যাওয়ার পরই দেখলাম হাওয়ার গতিবেগ বাড়লো। মাটিতে ধুপধুপ শব্দ হচ্ছে। একদল লোক মনে হল জীবন বাঁচানোর জন্য দৌঁড়ে পালাচ্ছে।
একটা শোঁ শোঁ আওয়াজ। সঙ্গে বিদ্যুতের ঝিলিক। মেঘের কড় কড় সেই আল্ট্রাভায়োনিক তরঙ্গ। বুকের ভেতরে কাঁপন ধরালো। হায় এ কি করলাম , এতো জীবন হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া। দু ’ এক ফোঁটা বৃষ্টি গায়ে লাগলো। ছাতাটা শক্ত করে ধরলাম। তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলাম, কে শোনে কার কথা। বুকের কাঁপন বেরে গেলো। একটা দমকা হাওয়ায় ধানীক্ষেতে আছাড় খেয়ে পরলাম। কাঁদাপানিতে পড়ে লেজে-গোবড়ে অবস্থা। তাড়াতাড়ি বাচ্চা মোবাইল (নোকিয়া ১৭০০ সাইজের মোবাইল) জ্বালিয়ে দেখলাম ঠিক আছি কিনা। না বহাল তবিয়েতেই আছি। গা – হাত – পা ঝেড়ে ঝুড়ে উঠে দাঁড়ালাম। বৃষ্টির বেগটা বাড়ল। কেউ যেনো আমাকে ঢিল ছুঁড়ে মারছে। ছাতা খুললাম। হাওয়ার চোটে দু ’ তিনবার ছাতা উল্টে গেলো , তাকে সোজা
করতে বেশ সময় লাগলো। নিজের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। কেনো মরতে এই মাঝরাতে এলাম। তার থেকে কাল রাতের ট্রেনে এলেই ভালো হতো। বৃষ্টির বেগ আরো
বেড়ে গেলো। প্রাণ পণে ছুটছি। সামনে একটা অশ্বথ গাছ দেখতে পাচ্ছি।
উসাইন বোল্ট তুমি কি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছো , এই মুহূর্তে তুমি আমার সঙ্গে দৌড়লে হলফ করে বলতে পারি , তুমি নিশ্চই আমার পেছনে থাকতে। ভিঁজে স্নান করে গেছি। অশ্বথ গাছের তলায় এসে কুত্তার মতো এক হাত জিভ বের করে পাগলা কুকুরের মত হাঁপাতে আরম্ভ করলাম। বিড়ি খাওয়া দম এতোটা দৌড়তে পেরেছে বাবার ভাগ্য ভালো। অশ্বথগাছের তলায় একটা মোটা সোঁটা শেকড়ে একটু বসলাম। অঝোড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। পেছনদিকে একটা পচাঁ মাইটাল ছিলো খেয়াল করিনি। বেশি উঁবু হয়ে বসলেই সোজা পচাঁ মাইলে গিয়ে পড়তাম। পনেরোটা লাক্স কিংবা লাইফ-বয় দিয়ে গোসল করালেও এ গন্ধ দূর হতোনা। ভাগ্য ভালো। সামনের রাস্তাটায় ধোঁয়ার মতো ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। তেমনি হাওয়া সঙ্গে বিদ্যুতের চমক আর মেঘের গর্জন। মাথার ওপর টপ টপ করে জল পরতে শুরু করলো , বুঝলাম গাছের পাতা বেয়ে জল পরছে। ছাতা খুলে গুঁটি-সুটি
মেরে বসলাম। শীত শীত করছে। সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটের কথা মনে পরে গেলো। শরীর থেকে ভেঁজা কাঁদামাটির একটা সোদা গন্ধও আমার তালগাছওয়ালা নাঁক এড়ালোনা।
মেঘের এফোঁড়-এফোঁড় করে বিভৎস একটা বিদ্যুৎ চমকালো সঙ্গে সঙ্গে বুক হিম করা মেঘের গর্জন। কিছুটা দূরে সামনের ঝোপটায় চোখ গেলো। স্পষ্ট দেখতে পেলাম। একজন ভদ্রমহিলা এক হাত লম্বা ঘোমটা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে। ধবধবে সাদা কাপড় পরহিত। আমি যেখানে বসে আছি। সেখান থেকে ওই ঝোপটার দূরত্ব খুব বেশি হলে বিশ থেকে পঁচিশ গজ দূরে। এতো রাতে ভদ্রমহিলা ! আমি খুব ভালো করে জানি। খুব কম করে এই সামনের আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোন বসতি নেই। মাঠের পর মাঠ খালি ধানীক্ষেত। বুকের ভেতরটা মৃদু কম্পন অনুভব করলাম। গলা টিপে কিংবা রক্ত চেঁটে যদি আমাকে এই মাঝরাতে মেরেও ফেলে, কাল সকালের আগে কেউ টের পাবে না। বিদ্যুৎ চমকেই চলেছে আর আমার চোখ ইচ্ছে না করলেও
বার বার ওদিকে চলে যাচ্ছে। হ্যাঁ বিদ্যুতের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ভদ্রমহিলা মাথা নীচু করে বসে আছেন। কতোক্ষণ বসে ছিলাম জানি না। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। মেঘের ওপর খুব রাগ হচ্ছিল। সময় পেলি না আর , বাড়ি পৌঁছবার পর যতখুশি হতে পারতিস, কে বারণ করতে যেতো। শুনেছি লোহা কাছে থাকলে ভূতে ধরে না। লোহা নাকি ভূতের যম। আমার ছাতার ডান্ডিটাতো লোহার। ধুর! লোহা
তোকে কে বললো , ওটা তো স্টেইনলেস স্টিলের। তাতে কি হয়েছে। স্টেইনলেসস্টিল কি সোনা দিয়ে তৈরি হয়। ওর মধ্যে লোহা আছে। সিলভার আছে। ভ্যাম্পায়ার হলে নিশ্চিত মরবে। আচ্ছা, চাঁনপুকুরের সাথে ভদ্রমহিলার কি কোনো যোগ-সূত্র আছে ?
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর সিদ্ধান্ত নিলাম, ঢের হয়েছে! আর নয়। মুখের বুলিতে সাহস আসলেও সামনে আগানোর সাহস পেলাম না। বৃষ্টির রাত। চারদিকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামছে। অশ্বথগাছের নিচ থেকে উত্তরদিকের শ্বশানটা দেখা যাচ্ছে। আজ মনে হয় চিতা পুড়িয়েছে, ধোঁয়ার কুন্ডলী আকাশের দিকে উড়ে উড়ে যাচ্ছে। শ্বশানের ভয়টুকু আরো মনে আঘাত হানলো। হঠাৎ মনে হলো, ধবধবে সাদা কাপড় পরা মহিলা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। গাছের উপর থেকে একজোঁড়া বাঁদুড় চিৎকার করে উঠলো। বাঁদুড়ের আওয়াজে যেনো, আমার হৃদপিন্ডটা এখনি বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। নিজেকে শান্ত রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালালাম। ঝিঁঝিঁপোকার আওয়াজ থেমে গেছে, বৃষ্টি তখনও বর্তমান।
হাতের মুঠোয় ব্যাগটা শক্ত করে ধরলাম। ঝুট এক দৌড় লাগালাম। জমির ছোট্ট আইলে উষ্ঠা খেয়ে আবার বামপাশের আমনদানের ক্ষেতে গিয়ে পরলাম। ব্যাগটা একটু দূরে ছিঁটকে পড়লো। হাতের ছাতাটা বাতাসের বেগে ডানপাশের জমিতে উল্টো হয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ চুপচাপ ওভাবেই থাকলাম। কানের কাছে হঠাৎ মিনমিনে সুরে কে যেনো বলে উঠলো,
“কি রে মিনসে থাকবি আমার সাথে, তোর একদলা মাংস আমার খুব পছন্দ হয়েছে !! ”
শরীর যেন অবশ হয়ে আসছিলো। আধ-শোয়া হয়ে উঠে বসলাম, চাঁনপুকুরের দিকে সাদা আলোর ছটা দেখা যাচ্ছে। পেছনদিকে এবার ব্যাগ নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। কাঁদাপানিতে সাদা শার্ট বাদামী রঙের হয়ে গেছে। ব্লু জিন্সের কথা নাইবা বললাম। পাম-সু এর ভেতরে চিংড়ীর হ্যাচারি করা যাবে। ব্যাগটা হাঁতড়াতে হাঁতড়াতে খুঁজে নিলাম। মেঘের বর্জ্রপাতের আলোয় অনেক কষ্টে ছাতাটাও বের করলাম। সাদা কাপড় পড়া ভদ্রমহিলা তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ছাতাটা শক্ত হাতে ধরে এবার মহিলা বরাবর ছুট লাগালাম। অনেক সহ্য করেছি আর নয়। চক-পাতিলা দৌড়ে বেগুন ক্ষেতে ঢুকে পড়লাম। ছাতিটার ডান্ডা উঁচু করে ধরে একদম বুক বরাবর সেঁধিয়ে দিলাম। ঠুস করে একটা শব্দ হলো। বেগুন ক্ষেতে আবার পিছলা খেয়ে পড়ে গেলাম। সোজা বাঁশের চিকন কঞ্চি দেয়া বেড়ার উপর। অল্পের জন্য চোখটা বেঁচে গেল। পেঁছন ফিরে তাঁকালাম, ভদ্রমহিলা তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশের বুক চিড়ে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। বিদ্যুত চমকানোর আলোয় যা দেখলাম তাতে শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো। কাকতাড়ুয়া, সাদা কাপড় পড়ানো। মাথার দিকটায় সিলভারের প্রলেপ দেয়া বিস্কুটের কাগজ দিয়ে বাঁধানো। পাটের জটা দিয়ে চুলের মত করে বানানো।
রাগে গজগজ করতে করতে চোখ মেলে সামনে তাকালাম। মেঘটাও রাগে গর্জন করে উঠে। সারাটা শরীর কাঁদায় মাখামাখি। হাতের ব্যাগটা দূরে কোথাও ছিটকে পরেছে। ছাতাটা তখনো আমার হাতের মুঠোয়। আবার বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। ব্যাগটাকে কোনরকমে খুঁজে পেলাম। হামাগুড়ি দিয়ে ব্যাগটাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। ভিঁজে চপচপে হয়ে গেছে। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বীরদর্পে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। ঐ দূর টিনের চালায় একটা হলুদ বাতি জ্বলছে। গন্তব্যস্থান সোডিয়ামের ঐ হলুদ বাতিওয়ালা বাড়ি। চারপাশে তখনো অবিরাম ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। এই মুহূর্তে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জল গায়ে মাখতে ভীষণ ভালোই লাগছে।
(সমাপ্ত)

জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’একটি শ্রেষ্ঠ সমকামী কবিতা !!!

কবি তারই অকৃত্রিম পুরুষ বন্ধু বনলতা সেন বাবুকে নিয়ে রচিত ‘বনলতা সেন’ বাংলা সাহিত্যে একটি শ্রেষ্ঠ সমকামী কবিতা !! বহুল আলোচিত কবিতা বলেই এর ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ প্রয়োজন। দীর্ঘদিন থেকে কবিতাটি একইভাবে পাঠ করা হচ্ছে। বেশীরভাগ পাঠক কবিতাটি সম্পর্কে পূর্ব-ধারণা নিয়ে কবিতাটি পাঠ করছেন। যার ফলে কবিতাটি তার বহুমাত্র্র্রিক ব্যাখা-বিশ্লেষণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’বনলতা সেন’কে ঘিরে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন নীচে তুলে ধরলামঃ-
বনলতা সেন কি নারী না পুরুষ কবিতটিতে তা স্পষ্ট নয়।”অন্ধকার বিদিশার নিশার মত চুল” এবং “শ্রাবস্তীর কারুকার্যের মত মুখ” এবং “পাখীর নীড়ের মত চোখ” নারী/পুরুষ যে কারো থাকতে পারে। বরং দীঘল কেশ,কাজল-টানা চোখ এর কথা উল্লেখ থাকলে বনলতা সেন যে আসলেই একজন নারী তা নিশ্চিত হওয়া যেত।
পুরো কবিতায় বনলতা সেন কর্তৃক কোন রমণীয় পোষাক যেমন, শাড়ীর আচল, স্তন-আবরণী উড়না/উত্তরীয় এসবের বর্ণনা নাই। এছাড়া কোনরকম প্রসাধনী/অলংকার ব্যবহারের বর্ণনা নাই। বাঙালী নারী প্রসাধন-প্রিয়,বিশেষ করে সুন্দরী নারীরা এ ব্যাপারে আরো সচেতন। বনলতা সেন পুরুষ বলেই কি এসব কবির নজরে আসেনি ?
কবি কি সমকামী ছিলেন ? যতদূর জানা যায় কবির সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্ক ভাল ছিল না, তাই কি গৃহত্যাগী বিবাগী কবি তার পুরুষ বন্ধু বনলতা সেন বাবু’কে অন্ধকারে আকাঙ্খা করেন ?
 শুধু চুল,মুখ ও চোখের বর্ণনা নারী দেহের সৌন্দর্য বর্ণনার জন্য যথেষ্ট কিনা ? নারী দেহের আকর্ষণীয় প্রত্যঙ্গ যেমন, বিল্ব স্তন, পদ্মযোনী, গুরু নিতম্ব এসব বর্ণনার অনুপস্থিতি কি তার নারী-সৌন্দর্যের ঘাটতি কিংবা বনলতা সেন বাবু একজন পুরুষ একথার ইঙ্গিত দেয় না?
পাখীর নীড় বলতে আমরা দেখি, কুড়িয়ে আনা খড়কুটোর নিশ্চল নিষ্প্রাণ বিবর্ণ স্তূপ।কাজেই পাখীর নীড়ের মত চোখ বলতে চোখে-ছানিপড়া ভাবলেশহীন বৃদ্ধার চোখের কথাই মনে আসে।
 “অন্ধকার বিদিশার নিশার মত চুল” এবং “শ্রাবস্তীর কারুকার্যের মত মুখ” সার্বজনীন উপমা কিনা? [সোনালী চুল ইংরেজদের প্রিয় এবং সরল মুখশ্রী অনেকের পছন্দ]
 “অন্ধকার বিদিশার নিশা” দ্বারা নিষ্প্রদীপ বিদিশা নগরীকে বুঝায় না। কাজেই ঘন-কালো চুলের উপমা হিসেবে এটা সঠিক নয়।
 অন্ধকারে বনলতার সাথে সাক্ষাৎ করে বনলতার সৌন্দর্য সম্পূর্ণ অবলোকন করা সম্ভব কিনা?
 বনলতা সেনের প্রতি কবির প্রেম কি একতরফা?
বনলতা কি শুধুই সৌন্দর্যময়ী না প্রেমময়ী? বনলতা সেন চরিত্রে প্রেম ও সৌন্দর্যের অসম সংমিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়।
 জীবনানন্দের প্রতি বনলতা সেনের প্রকৃতই প্রেম নাকি একজন চরম হতাশাগ্রস্থ পুরুষের প্রতি সহানুভূতি?
 কবি বনলতা সেনকে কেন অন্ধকারে আকাঙ্খা করেন? [ ডঃ আকবর আলী, প্রাক্তন উপদেষ্টা,তত্ত্বাবধায়ক সরকার টিভি চ্যানেলে একই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন]
 বনলতা কি বিবাহিতা না কুমারী? কবির সাথে এই সম্পর্ক কি পরকীয়া?
 কবিকে দু’দন্ড শান্তি দিয়েছিলেন বনলতা সেন, এই শান্তি কি শুধুই মানসিক নাকি দৈহিক যৌন তৃপ্তি?
 নাটোরের বনলতা সেন কবিকে দু’দন্ড শান্তি দিয়েছিলেন,তবে কবি আর কোথায় শান্তি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন?
 হাজার বছরের ক্লান্ত কবি মাত্র দুদন্ড শান্তি পাওয়ার কথা অতৃপ্তির সাথে অভিমান-ভরে জানিয়েছেন। কবির এই অপূর্ণ প্রাপ্তির বেদনা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে। কবিতাটিতে প্রাপ্তির চেয়ে প্রত্যাশাই প্রধান্য পেয়েছে।
 নাটোরের বনলতা সেন এর সাথে কবির কি নাটোরেই দেখা হয়েছিল নাকি অন্য কোথাও…
 কবি যে সময়ের নাটোরের বনলতা সেন এর কথা বলেছেন সে সময়ে নাটোরে সেন বংশীয়া সম্ভ্রান্ত সুন্দরী রমণী বসবাস করতেন বলে জানা যায় না।
 “বনলতা সেন” কবিতা জুড়ে একজন পর্যটকের বর্ণনা প্রাধান্য পেয়েছে নাকি একজন প্রেমিকের উচ্ছাস প্রাধান্য পেয়েছে?
 কবি কি শুধুই ভ্রমণ-ক্লান্ত ছিলেন নাকি দেহে-মনে অতৃপ্ত ছিলেন?
 বনলতার সাথে কবির এই মিলন দুটি অসমবয়সী নর-নারীর মিলন কিনা,কারণ দীর্ঘ পথচলার শেষে কবি বনলতা সেনের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। আর সেজন্যই কি অসমবয়সী কবিকে দু’দন্ড শান্তি দিয়েই বনলতা সেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন?
 কবি কি শেষ পর্যন্ত একজন প্রত্যাখাত পুরুষ ? জীবনানন্দ ছিলেন দাশ বংশীয় আর বনলতা ছিলেন সেন বংশীয়া- এ জন্যই কি বননলতা অসবর্ণ সম্পর্কে সম্মত হননি।
 কবিকে বনলতা সেনের তির্যক প্র্রশ্ন– এতদিন কোথায় ছিলেন’? বনলতা সেন কি কবিকে সন্দেহ করতেন? মনে হয় অন্ধকারে সাক্ষাৎ করতে আসায় বনলতা সেন কবির উপর খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন।
 বনলতা সেন কবিকে খুব বেশী ভালবাসতেন বলে মনে হয় না। কারণ কবি এতদিন কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে ও কেমন ছিলেন জানতে চাওয়া হয়নি। কাজেই দীর্ঘ অদর্শনের পর নায়ক-নায়িকার আবেগময় সাক্ষাৎ এখানে অনুপস্থিত।
 বনলতা সেন কি কবিকে অনাগ্রহের সাথে বরণ করেছিলেন ,না হয় মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে সাদর অভ্যর্থনার বর্ণনা কবিতাটিতে অনুপস্থিত কেন?
 অন্ধকারে কবির উপস্থিতি টের পেয়ে ও বনলতা কেন প্রদীপ জ্বালেননি ? অন্ধকারের সাক্ষাৎ পর্বটি প্রচলিত নৈতিকতা-বিরোধী কিনা?
 “ডানায় রোদের গন্ধ মুছে ফেলে চিল”–’রোদের রঙ’ এর জায়গায় ‘রোদের গন্ধ’ লেখার মত ভুল তথ্য কি একজন কবির কাছ থেকে আদৌ প্রত্যাশিত ? কবি কি বর্ণান্ধ ছিলেন?
 তাছাড়া কবির চিন্তাধারায় যথেষ্ট অসামঞ্জস্যতা বিদ্যমান। হাজার বছর পথ হাটার কথা বলে পরক্ষণেই জলপথে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরের বর্ণনা দিয়েছেন। মনে হয় কবি চিন্তার খেই হারিয়ে ফেলেছেন।
 মালয় সাগরের আদৌ কোন ভৌগলিক অস্তিত্ব আছে কিনা? এখানে কবির ভৌগলিক জ্ঞানের দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়।
 কবির ভৌগলিক বর্ণনা প্রাচীন এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সীমিত — তাহলে এই বর্ণনা কিভাবে সকল দেশ কালের পুরুষের প্রতিনিধিত্ব করে? এটি এশিয়াবাসী হতাশাগ্রস্থ পুরুষের নারীর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ।
 বনলতা সেন কবিতায় সাগর,সবুজ ঘাসের দ্বীপ,হালভাঙা নাবিক,নদীর উল্লেখ থেকে সমুদ্রগামী জাহাজে দীর্ঘদিন নারীসঙ্গবর্জিত নাবিকদের কথা মনে আসে। এটি স্থলভাগের পুরুষের স্বগতোক্তি কখনো নয়। সার্বজনীন পুরুষ এখানে অনুপস্থিত।
 কবি মাত্র্র হাজার বছর পৃথিবীর পথে হেটেছেন– এ দ্বারা কবি হাজার বছরের পুরুষের কথাই বলেছেন,বক্তব্যটি সর্বকালের পুরুষকে ধারণ করেনি।
 কবিতাটিতে আদিম যুগের শিকারী ও শিকারের কথা মনে করিয়ে দেয়। পুরুষ শিকারী তার নারী শিকারকে খুজে বেড়ায়। এখানে ও নারী পুরুষের অসম আচরণ পরিলক্ষিত হয়। অর্থ্যাৎ পুরুষ সকর্মক নারী অকর্মক/নিষ্ক্রিয়।
 ‘মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’ থেকে বোঝা যায় কবি ও বনলতা সেন সম্ভবত খুব ঘনিষ্ট ছিলেন না, না হলে উভয়ে পাশাপশি না বসে মুখোমুখি বসেছিলেন কেন? অর্থ্যাৎ বনলতা সেন কবির থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন।
 বনলতা সেন চরিত্রটি (সুন্দরী,অহংকারী,পুরুষবিদ্বেষী যিনি পুরুষকে দুদন্ড শান্তি দিয়েই ছুড়ে ফেলে দেন এবং স্থায়ীভাবে গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক) যা সুন্দরী নারীদের বহুগামীতার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেয়।
 জীবনানন্দ চরিত্রটি (ভীতু,হতাশাগ্রস্থ,অতিমাত্রায় নারীপ্রেমিক যিনি নারীকেই শান্তি-স্বরূপা বলে মনে করেন,ঈশ্বর কিংবা প্রকৃতি তাকে কোন শান্তি দিতে পারে না) যিনি নারীর নিকট কাতর আবেদন-নিবেদনে অভ্যস্ত এবং নারীকে স্থায়ীভাবে অধিকার করতে জানেন না।
 বনলতা সেন কবিতায় ধূসর জগত,অন্ধকার বিদিশার নিশা,থাকে শুধু অন্ধকার– এসব বর্ণনা থেকে বলা যায় এটি একটি বিবর্ণ বর্ণের কবিতা।
 তাই সবশেষে বলা যায় হাজার বছর ধরে অনোন্যপায় পুরুষ যে নারীর আকাংখা করে এসেছে তাকে না পেয়ে কল্পনায় কিছু সুখ খুজে নিয়ে বাচতে চেয়েছে। একজন কবি হযত হাজার বছর নারীর সন্ধান করে ক্লান্ত হয়ে বনলতা সেন এর নিকট আশ্রয় চেয়েছেন কিন্তু একজন প্রকৃত নারীর সন্ধান লাভের জন্য পুরুষ জাতিকে হয়তো অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে বনলতা সেনই সর্বশেষ ও চূড়ান্ত কাম্য নারী হতে পারে না।।

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০ বছর বয়সে নেয়া যে ৫ টি সিদ্ধান্ত আপনার জীবনকে করবে অনেক সুখী ।


অনেকের শেষ বয়সে গিয়ে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে আফসোস করে থাকেন। বয়স ৫০ পার হতে না হতেই যখন নানা দুশ্চিন্তা এবং অসুস্থতা দেহে ভর করে তখন অনেকেই ভাবেন প্রথম বয়সে ভুল সিদ্ধান্তগুলো না নিলে জীবনটা অন্যরকম হয়ে যেতো। কথাটি আসলেই সত্যি। সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে জীবনটা আসলেই অনেক বেশি সুখের হয়ে উঠে। শেষ বয়সে গিয়ে আর আফসোস করতে হয় না।
১) ধূমপান না করার সিদ্ধান্ত
আপনি হয়তো এখন বুঝতে পারছেন না কিন্তু আপনার নিয়মিত ধূমপানের কারণে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে আপনার জীবনী শক্তি। আপনি বর্তমানে এর ভয়াবহতা টের না পেলেও শেষ বয়সে যখন অসুস্থ শরীর টানতে পারবেন না তখন ঠিকই আফসোসের বাক্য বলতে থাকবেন। কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকবে না। তাই সতর্ক হয়ে যান সময় থাকতেই।
২) অতিরিক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়ার সিদ্ধান্ত
মুখের স্বাদের কথা ভেবে এবং তরুণ বয়সে বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডায় হরহামেশাই অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন আপনি। এখন এইসব খাবার খেতে খুব ভালো লাগছে, কিন্তু এই সকল খাবারের বিরূপ প্রভাব দেহের উপর পড়া শুরু করবে বয়স ৩৫-৩৫ এর পর থেকেই। অল্প বয়সেউ বুড়িয়ে যাওয়া এইসকল অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই যদি খুব বেশিই খেতে ইচ্ছে করে তাহলে অল্প পরিমানেই খান। বেশি খাবেন না।
৩) বাবা-মা এবং ভাই-বোনের সাথে সু-সম্পর্কের
কথাটি রুঢ় হলেও সত্যি যে আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন বাদে পৃথিবীতে আপনার কষ্টে দুঃখ পাওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাবেন না। বর্তমানে অনেক বন্ধু বান্ধবের ভিড়ে আপনি এই সত্যটি উপেক্ষা করলেও যখন বয়স বাড়তে থাকবে তখন সত্য আপনার চোখের সামনে উপস্থিত হবে। তাই সময় থাকতেই এই সম্পর্কগুলো ধরে রাখুন। কখনো খারাপ ব্যবহার করবেন না।
৪) সঞ্চয় শুরু করার সিদ্ধান্ত
২০ বছর বয়েসে সত্যিকার অর্থেই সঞ্চয়ের কথা কারো মাথায় থাকে না যদি না সে অনেক কষ্টে মানুষ হয়ে থাকেন। অনেকেই ভাবেন মাত্র তো ২০ বছর বয়স সঞ্চয়ের অনেকটা সময়ে বাকি পড়ে আছে। কিন্তু আপনার এই ভাবনা ভাবনাই থেকে যাবে। আজকে না কালকে করে সঞ্চয়ের বিষয়টি অনেক বেশি উপেক্ষা করার কারণে জীবনের অনেক সুযোগের সময় টাকা না থাকার কারণে সুযোগ হারিয়ে ফেলতে পারেন। তাই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করে হলেও সঞ্চয়ের সিদ্ধান্ত নিন।
৫) নিজের জীবনের লক্ষ্য সঠিক করার সিদ্ধান্ত
জীবনের লক্ষ্য সঠিক করা জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি। আপনি যদি ভেবে থাকেন ২০ বছর বয়সে এসে এই লক্ষ্য নিয়ে না ভাবলেও চলবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আপনি যতো দেরি করবেন জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছুতে আপনার ততোই দেরি হবে। পড়ালেখা শেষ করে একটি চাকরীর আশা নিয়ে আজকাল কেউ বড় হতে পারে না। বরং পড়ালেখার পাশাপাশি অল্প বয়স থেকেই অন্যান্য কাজে নিজেকে জড়িয়ে নিতে পারলেই জীবনের লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব।

ভালোবাসা আসলে কি ? ভালবাসা সম্পর্কে ১০ টি সত্য কথা ।


ভালোবাসা আসলে কী জিনিস? কেউ কি ভেবে দেখেছেন ভালোবাসার সত্যিকারের সংজ্ঞা কী? ভালোবাসার আসলে কোনো সংজ্ঞা নেই। ভালোবাসার রয়েছে কিছু বৈশিষ্ট্য এবং সত্য। যে সত্যগুলো সকল সত্যিকারের ভালোবাসার মধ্যেই থাকে। কিন্তু আজকালের ঠুনকো ভালোবাসার অভিনয়ের কারণে এই সত্যগুলো কেউ মনে রাখে না। ভুলে যায় অনেকেই। সেকারণেই আজকাল ভালোবাসার দাম নেই মোটেই। চোখে পড়ে না আগেকার সেই সত্যিকারের ভালোবাসা।
১) ভালোবাসা সাধারনত জোর করে হয় না
যতোই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন, এই জিনিসটি মূলত কারোরই অজানা নয় যে জোর করে কখনো কাউকে ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসা পুরোপুরি একজন মানুষের একান্ত ব্যাপার।
২) প্রেম ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে
জীবনে চলার সময় আমরা অনেক কিছুরই প্রেমে পড়ে যাই কিন্তু তাকে ভালোবাসা বলা চলে না। সুতরাং প্রেম এবং ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু এই সত্যটি আমরা অনেকেই মানতে চাই না।
৩) ভালোবাসা ধরে রাখতে করতে হয় অনেক কিছুই
ভালোবাসা ধরে রাখতে অনেক কিছুই করতে হয়। নতুবা সময়ের সাথে সাথে এই ভালোবাসার রঙ বদলে যেতে থাকে। এবং নিজেকে সেই রঙের সাথে মিলে গিয়েই ধরে রাখতে হয় ভালোবাসা।
৪) অন্যকে ভালোবাসার পূর্বে নিজেকে ভালোবাসা উচিত

আপনি যদি নিজেকে ভালোবাসতে না পারেন তবে অন্য কেউই আপনাকে ভালোবাসতে পারবেন না। এই সত্যি অনেকেই জানি। কিন্তু মানতে পারি না।
৫) ভালোবাসায় স্বার্থপরতা থাকে না
ভালোবাসা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ একটি ব্যাপার। যখন এতে স্বার্থ জড়িত থাকে তখন তা আর ভালোবাসার পর্যায়ে পড়ে না।
৬) ভালোবাসা কখনো পারফেক্ট হয় না
একজন মানুষ যেমন কখনো পারফেক্ট হতে পারেন না তেমনই ভালোবাসা কখনো পারফেক্ট হবে না। অনেক খুঁত থাকবে এতে। কিন্তু তা মেনে নিয়ে চলার নামই ভালোবাসা।
৭) ভালোবাসার অর্থ অন্যের সবকিছুকে আপন করে নেয়া
একজন মানুষের ইম্পারফেকশনকে সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার নামই ভালোবাসা। অন্য আরেকটি মানুষের সব দোষ গুণ মেনে নেয়াই সত্যিকারের ভালোবাসা। তাকে পরিবর্তন করে নিতে চাইলে তা ভালোবাসা নয়।
৮) শুধু আকর্ষণই নয়, এতে থাকতে হয় সম্মান, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস
ভালোবাসা জিনিসটি শুধুমাত্র একে অপরের আকর্ষণের মাধ্যমে তৈরি হয় না। এতে থাকতে হয় একেঅপরের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস।
৯) ভালোবাসা মানে প্রতিজ্ঞা

কাউকে ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে তা প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া, যা আজকালের ভালোবাসায় একেবারেই দেখা যায় না।
১০) মেকি ভাবে থাকা ভালোবাসা নয়
নিজের স্বত্বাটাকে বদলে অন্য আরেকজনের মতো অভিনয় করে কারো সামনে থাকার নাম ভালোবাসা নয়। ভালোবাসায় কখনো মেকিভাব থাকতে পারে না।